ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখে বিস্তারিত জানুন

আমাদের অনেক ভাই ও বোন ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখে হবে সে সম্পর্কে জানতে চান। আপনিও যদি ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখে হবে সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়ুন।

ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখে-বিস্তারিত-জানুন


কারণ আজকের এই আর্টিকেলে  মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। বাংলাদেশের ৯০% এর অধিক মানুষ মুসলমান ধর্মের।মুসলিম জাতি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে থাকে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখে ?

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখে? 

বাংলাদেশের আকাশে ২৪ শে আগস্ট রোজ রবিবার রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার। ২৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সভাকক্ষের সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ.ফ.ম.খালিদ হোসেন।
 

বাংলাদেশে প্রতিবছর হিজরি সাল অনুযায়ী ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা হয়। ২০২৫ সালের এ বছর ২৪ শে আগস্ট আকাশের চাঁদ দেখা না যাওয়াই সফর মাস ৩০ দিনে শেষ হচ্ছে। তাই ১২ই রবিউল আউয়াল ৬ সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার পালিত হবে। ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। 

ঈদে মিলাদুন্নবী কি? 

ঈদে মিলাদুন্নবী হলো হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন উদযাপনের একটি ধর্মীয় দিন। এখানে ঈদ মানে উৎসব, মিলাদ মানে জন্ম, এবং নবী মানে নবী বা রাসূল। অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী মানে হচ্ছে নবীজির জন্ম উৎসব পালন করা। প্রতিবছর ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে এই দিনটিতে মোমবাতি প্রজ্জলন,অনুষ্ঠান এবং দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। হাদিসের মতে এ দিনেই নবীজি সাঃ জন্মগ্রহণ করেন এবং একই তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। 

ঈদে মিলাদুন্নবী কেন পালন করা হয় 

ঈদে মিলাদুন্নবী নবী হলো মুসলিম উম্মার জন্য একটি বিশেষ দিন, এই দিনটি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এ জন্ম ও মৃত্যু দিন হিসাবে স্মরণ করা হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা একত্রিত হন, করে ওঠে এবং তারা অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করা,

নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নৈতিকতা বৃদ্ধি করার উপলক্ষ হিসাবে কাজ করে। এছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ঐক্য ও সহানুভূতির অনুভূতি বৃদ্ধি করা এবং ইসলামের শান্তি ও ন্যায়ের বার্তা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। 

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর 

  • প্রশ্নঃ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ? 
  • উত্তরঃ যে দিনটিতে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্ম দিবস পালন করা হয় সেদিনটি মূলত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস নয় বরং তা ছিল তার মৃত্যু দিবস। তাই এই দিনটি পালন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এছাড়াও কোন ব্যক্তির জন্ম দিবস পালন করা সরাসরি ইসলাম বিরোধী কাজ। 
  • প্রশ্নঃ ৬ সেপ্টেম্বর আরবি কি দিবস? 
  • উত্তরঃ ৬ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালিত হবে। 
  • প্রশ্নঃ ঈদে মিলাদুন্নবী কি বড় ছুটি? 
  • উত্তরঃ এই দিনটিতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন স্মরণে বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার অনেক দেশের সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালিত হয়। 

বাংলাদেশে কখন থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে 

বর্তমান বাংলাদেশ ঈদে মিলাদুন্নবী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকেই সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ২০২১ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। পরের বছরগুলোতেও এটা সরকারের ছুটির তালিকায় ধারাবাহিকভাবে রয়েছে। 
ঈদে-মিলাদুন্নবী-২০২৫-কত-তারিখে


১৯৯৯ সালে এবং ২০০০ সালেও সরকারি ছুটির তালিকায় ঈদে মিলাদুন্নবী অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এটি সময়ের সাথে নিয়মিত ভাবে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৫ সাল থেকে।  এই দিন সকল  সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন সারাদেশে একযোগে ছুটি পালিত হয়। 

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ নাকি বিদআত?

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ নাকি বিদআত  এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত প্রশ্ন। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন মাযহাব ও আলেমগণের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো যারা জায়েজ মনে করে তাদের মতামত এবং যারা বিদআত মনে করে তাদের মতামত। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা আসলেই জায়েজ নাকি বিদআত। প্রথমেই আমরা জানবো

যারা জায়েজ মনে করে তাদের মতামত 

  • ঈদে মিলাদুন্নবীর এই দিনটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর চরিত্রও স্মরণ করা হয় যা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য গঠন, নৈতিকতা ও ঈমান মজবুত করে। এই উদ্দেশ্যে দুরুদ, ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ইত্যাদি করা জায়েজ। 
  • কোরআন ও হাদীসে ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর রহমতের উপর আনন্দিত হওয়া বৈধ বলা হয়েছে।সূরা  ইউনূস ১০ নম্বর পারা ৫৮ নম্বর আয়াত। এছাড়াও অন্যত্র বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাঃ কে আল্লাহর সবচেয়ে বড় রহমত বলে বিবেচনা করা হয়। সূরা আম্বিয়া আয়াত নম্বর ১০৭ ২১ নম্বর পারা। তাই তার জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করা জায়েজ হতে পারে। 
  • এছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বহু দেশে শত শত বছর ধরে এটি উদযাপিত হয়ে  আসছে। যেমন পাকিস্তান ভারত বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া মিশর তুরস্ক ইত্যাদি দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়ে থাকে। অনেক আলেম সীমার মধ্য থেকে মিলাদ উদযাপন সমর্থন করেছেন। সেটি যেন সীমার অতিক্রম না করে সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। 

যারা বিদআত মনে করে তাদের মতামত

  • হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সাহাবারা তার জীবন সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বুঝতেন। তারা কোনদিন ঈদে মিলাদুন্নবীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি এমনকি তারা কোনদিন ঈদে মিলাদুন্নবী দিনটি উদযাপন করেননি। এমনকি তাবে তাবেয়ীনরা কোনদিনও ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেননি। 
  • হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী  "যে ব্যক্তি আমাদের দিনের মধ্যে এমন কোন কিছু সংযোজন করে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নই, তা প্রত্যাখ্যাত"। (সহীহ মুসলিম) 
  • অন্য একটি হাদিসে এসেছে "ইসলাম কেবল দুটি ঈদের অনুমতি দিয়েছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। অন্য কোন ঈদ শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত নয়"। এই হাদিসগুলোর উপর ভিত্তি করে অনেক সালাফি ও দেওবন্দী আলেম মনে করেন এটি ইসলামে সংযোজন এবং বিদআত।

আমাদের মতে কেউ যদি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন না করে, তাহলে তাকে জোর করা ঠিক নয়। কেউ যদি সীমার মধ্যে মধ্যে থেকে (বিদআত, শিরক, গান বাজনা, আতশবাজি না থাকে ) ভালো উদ্দেশ্যে পালন করে তাহলে তাকেও বেদাতি বলে অপমান করা অনুচিত। কারণ ইসলামের আদর্শ হলো শান্তি ও সহনশীলতা। তবে বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার উপলক্ষে অনেক বিদাতি ও শিরক এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কাজ করা হয়ে থাকে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী পালন না করাই উচিত বলে আমি মনে করি।

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কিছু কথা 

ঈদে মিলাদুন্নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জন্ম এবং মৃত্যু দিবস হিসেবে পরিচিত। যিনি ছিলেন অন্ধকার যুগের আলো, তার জীবনী আমাদের সবচেয়ে  বড় দৃষ্টান্ত। এই দিনটি শুধু আনন্দের দিন নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির আদর্শে জীবন গড়ার শপথ গ্রহণের দিন।এই দিনে আমাদের উচিত নবীজির জীবনের আদর্শ স্মরণ করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা, মানুষের উপকার করা এবং দান সদকা করা।


কিন্তু বর্তমানে এগুলো না করে বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয় এবং বাড়িতে ভালো খাবার রান্না করা হয়। শুধু তারা এই দিনটিকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে কিন্তু এই দিন যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইন্তেকাল করেছেন, সে ব্যাপারে তারা গাফেল থাকে। আমাদের উচিত ছিল এই দিনে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা এবং তওবা করা। কারণ মহান আল্লাহ তালা বলেন "প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে"। তাই আসুন আমরা সচেতন হই এবং আল্লাহকে ভয় করি। সকল বিদআত মুক্ত ইবাদত করি। 

 মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর 

  • প্রশ্নঃ ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ? 
  • উত্তরঃ ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর পালিত হবে।
  • প্রশ্নঃ মিলাদ কি সুন্নি ধর্মে জায়েজ?
  • উত্তরঃ এটি সাধারণত চারটি সুন্নি মাযহাব হানাফী, মালেকি, সাফিঈ এবং হাম্বলী (বিদআত, শিরক, গান বাজনা, আতশবাজি যদি না থাকে) মাযহাব জুড়ে অনুমোদিত। তবে দেওবন্দী এবং সালাফি আন্দোলন এটাকে নিন্দনীয় বিদআত (নতুনত্ব) বলে মনে করে।
  • প্রশ্নঃ ইসলামে কি মৃত্যুর পর মিলাদ করা যায়? 
  • উত্তরঃ কারো মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট বার্ষিকী পালন করা সুন্নত নয়। তবে লোকেরা যদি একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতে চাই,এবং মৃত ব্যক্তিকে তার স্ওয়াব  দান  করতে চাই, তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। 

লেখকের শেষ কথা

আমরা আজকের সমাজে অসভ্যতা হিংসা ও বিবাদ এর মধ্যে বসবাস করছি। সমাজে শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে শক্তিশালী  হাতিয়ার হল নবীজির জীবনী হৃদয়ে ধারণ করা এবং তার আদর্শকে অনুকরণের মাধ্যমে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন শুধু উৎসবের আনন্দ দেখতে না পাই, তার আদর্শ, দয়া এমনকি চ্যালেঞ্জ ময় পথ চলা ও উপলব্ধি মেনে চলে এটাই হওয়া উচিত আমাদের বাস্তব লক্ষ্য।

আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ নাকি বিদআত সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এরকম আরো ইনফরমেটিভ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট protechtutor এর সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন